ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের মাঝে নৈতিকতার অভাবের কারণ কী?


বাংলাদেশে এত ধার্মিক তবুও নৈতিকতা অভাব কেন? HumanPhilo
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এত এত ধার্মিক তবু তাদের মাঝে নৈতিকতার অভাব কেন? ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের মাঝে নৈতিকতার অভাবের কারণ কী? যে দেশের মানুষের আজানের ধ্বনিতে ভোরের ঘুম ভাঙ্গে। যে দেশে এত মসজিদ এত মাদ্রাসা। যে দেশের মাটিতে সারা বছর কুরআনের মাহফিল হয়, সে দেশের মানুষের মধ্যে নৈতিকতার অভাবের কারণ কি? আমাদের চারপাশে এত ইসলামিক আয়োজন তবুও নৈতিকতার ছিটে ফোঁটা নেই। এদেশে এত মাদ্রাসায় এত মসজিদ এত হাফেজ এত মুফতি মহাদেশ এত ধার্মিক ব্যক্তিবর্গ তবু কেন নৈতিকতার অভাব? এত কিছুর পরেও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নৈতিকতার অভাবের কারণ কি? তা জানার জন্য আজকের এই ব্লগপোস্ট। বাংলাদেশ এত ধার্মিক মানুষ তবু কেন নৈতিকতা নেই তাদের মাঝে? এর জবাব হলো- প্রথম থেকেই এদেশে শুরু হয়েছিল শিয়া প্রভাবিত এক বিকৃত ইসলামের চর্চা। বেশিরভাগ মানুষই লোক দেখানো মুসলিম। বাইরে ঠাট থাকলেও অন্তরে ইসলাম নেই তাদের। প্রকৃত ইসলামিক জ্ঞান চর্চার শিক্ষা এদেশে নেই। এদেশের মুসলীমগণ নবী সাঃ এর মহত্ব ও ত্যাগের প্রকৃত ইতিহাস যেমন জানেনা, তেমনি নিম্ন মানের মাদ্রাসার হুজুররা কেবল কবরের ভয় ভীতির ইসলাম প্রচার করেন। ওই ভয়ে পুরুষরা সাজেন লোক দেখানো মুসল্লি, আর মহিলারা পরেন স্টাইলের হিজাব।
এদেশের মানুষ রমজান আসলেই রোজা করি, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আমরা কিছুই খাইনা। কারণ এটা আল্লাহর নির্দেশ এবং রোজা পালন করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সবাই উপোস থেকে রোযা পালন করে তাই আমিও করি। এদেশের মানুষ হজ করে, ওমরা করে। মাথায় টুপি পড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যায় মসজিদে। এত কিছুর পরও এদেশের মানুষ মিথ্যা বলে। একজনের হক আরেকজন মারে। দুর্নীতি করে। লুটরাজ করে। ঘুষ খায়। এমন কোন পাপ নেই যা করে না! এসবের পিছনে কারণ কি, এত যে ধার্মিক তারপরও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নৈতিকতা নেই কেন??
এদেশে চলছে নিজের স্বার্থে ইসলাম চর্চা। ধর্মকে তারা শুধু নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্যই ব্যবহার করে থাকেন। ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে নিজেদের বিভিন্ন স্বার্থে। যার কারণে এখানে সবাই জানে নামাজ জান্নাতের চাবি। কিন্তু নামাজের প্রকৃত শিক্ষা কি? নামাজের মহত্ত্ব কি ? নামাজে প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে সরল পথ কিন্তু সরল পথে কেউ নেই। নামাজের অনেকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু এদেশে মানুষ নামাজ পড়ে নিজেদের একটি গন্তব্যে পৌঁছার স্বার্থ নিয়ে।
এদেশে মানুষ হজ্জ করে নামের পূর্বে হাজি উপাধি ধারণ করে সমাজের বাহবা ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। 
এদেশে মানুষ অন্তর থেকে আল্লাহকে খোজেনা, মহাবিশ্ব সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, তাদের মধ্যে আল্লাহর ইশকের আগুন নেই, অন্তরে আল্লাহ নেই, যা আছে তা হল লোক দেখানো ইবাদত। তাই তাদের মধ্যে নৈতিকতা, তাকওয়া ও এহসান নেই। অসৎ কাজ, অপরাধ, অসৎ রোজগার ও দুর্নীতি করার সময় আল্লাহর কথা তাদের মনে আসেনা শুধুমাত্র নিজ স্বার্থের কারণে।
আর এ সুযোগ নিয়ে নব্বই দশকের বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ইসলামকে বারবার কটাক্ষ করে, ইসলামকে কালিমালিপ্ত করে, ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপনা করে মুসলীমদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া, শিয়া প্রভাবিত সুফী মতবাদপুষ্ট মাজার  ভিত্তিক কবর পুঁজা ও পীরতান্ত্রিক ইসলামের চর্চার দ্বারা অর্থ উপার্জন তথা জীবিকার্জনের ধান্ধা চলছে এখানে প্রায় আটশত বছর ধরে। এ বিকৃত ইসলাম চর্চার শিকড় এখানে এতবেশী গভীরে প্রোথিত যে, তা থেকে বের হয়ে আসার মত জ্ঞান চর্চার প্রতিষ্ঠান এখানে নেই বললেই চলে।
টুপি, পাঞ্জাবী, দাঁড়ি-- এদেশে ধর্মের একটা ছদ্মবেশ মাত্র। মক্তব, মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার, পীরের খানকা -- সবর্ত্র বিভিন্ন কৌশলে চলছে ধর্ম ব্যবসা, শুধু নেই কুরআন ভিত্তিক প্রকৃত জ্ঞান চর্চা, নেই বিজ্ঞান ও শিল্প চর্চা, নেই ফকিহি সাধনা। 
ডন বাদশা থাকার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশুদ্ধি কিনতু এদেশে দান চলে লোক দেখানো, যাকাত তাও লোক দেখানো, রোজা শুধুই ছাওয়াবের উপবাস। মসজিদের শান-শওকত বাড়ে, এসির বাতাসে মুসল্লিদের আরাম আয়েশ বাড়ে, কিন্তু মসজিদের মহল্লাতেই অভাবী, অসহায়, দুঃখী মানুষের আহাজারী শোনার কেউ নেই। তাদের ঘরে চাল-ডাল নেই, পড়নে ভাল কাপড় নেই, অসুখে ধুকে ধুকে মরে, বিবাহযোগ্য কন্যার দায়ে নুহ্যমান পিতা, অনাহার সন্তানগুলোর জন্য না আছে খাবার, আর না আছে শিক্ষা,  অথচ মুসল্লীরা তা শুনতে পায়না, দেখতেও পায় না।
এদেশে মসজিদ কমিটিতে প্রাধান্য পায় ঘুষখোর, সুদখোর ও অজ্ঞ ধনাঢ্য ব্যক্তিরা, ইমাম তাদের চাকর, তাদের কথায় ইমাম উঠে আর বসে। ইমামরা মসজিদ কমিটির গোলাম হয়ে বসে থাকে ইমাম কি বয়ান দিবেন না দিবেন সব কমিটির দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশের মসজিদগুলোতে অযোগ্য কমিটি থাকার কারণে ইমামরা তাদের কথায় উঠে আর বসে। সমাজ চলে এই অযোগ্য লোকদের দ্বারা। যেখানে ইমাম শুধু একটি পদ মাত্র।
এখানে, মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম-মুফতিরা তাদের ছাত্রদের বলাৎকার আর রেপের সংখ্যায় বরাবরই পূর্বের রেকর্ড ব্রেক করে। আমাদের দেশের মাদ্রাসা মুক্তবগুলোতে এ ঘটনা নতুন নয়, প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা ঘটে থাকে। যে দেশের ইমাম মুফতি আলেমদের দ্বারা  এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, সে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন হবে তা বোঝা যায়। 
এখানে মাজারগুলোতে ধর্মচর্চা করে গাঁঞ্জুটে মাতাল আর মুর্খরা। তারা গঞ্জিকার ধোঁয়ার ঘোরে কবরে আল্লাহর রূপ দেখে, সেজদায় হাবুডুবু খায়, পবিত্রতা আর হালাল-হারামের ধার ধারে না। 
এখানে পীরের খানকাগুলোতে চলে মাইকের উচ্চৈস্বরে টাল-মাটাল বিদা'আতী জিকির। সেই ফাঁকে ধান্ধাবাজ পীরগুলো করে অর্থের ফিকির। এখানে নেই প্রকৃত আধ্যাত্মিক জ্ঞানের চর্চা, নেই প্রযুক্তির কোন ধ্যান ধারনা, নেই মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোন গভীর চিন্তা। 
এদেশে মাদ্রাসাগুলোতে কুরআনের হাফেজ তৈরি করে খতম আর দোয়ার ব্যবসা শিখানো হয়। কুরআনে হাফেজ অথচ কুরআন বুঝে না, ইসলাম ও মুসলীম কি তাও বিকৃতভাবে বুঝতে চেষ্টা করে।
একখানে ইসলামের নামধারী বড় বড় বক্তাগণ স্বঘোষিত বড় বড় উপাধি ধারন করে লক্ষ জনতার সামনে গলা ফাটিয়ে, মাইকের তার ছিড়ে, চেয়ারে লাফিয়ে উঠে বসে, চিৎকার চেচামেচি আর গিবত চর্চা করে জনতাকে জেহাদের দীক্ষা দেয়, কিন্তু বিজ্ঞানময় কুরআন বুঝে পড়তে, এহসান চর্চা করতে শিক্ষা দেয় না। অজ্ঞ জনতার সামনে বিভিন্ন গানের সুরে নানাহ কিসসা-কাহিনী বর্ণনা করে কেঁদে-কেটে, আর কাঁদিয়ে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। অজ্ঞ জনতা অন্ধকারেই থেকে যায়। 
এদেশে,  আলেম, শাসক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ- প্রায় সবাই ধর্মকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন। অথচ, ধর্ম হল- হেদায়েতের পথ। এখানে হেদায়েতের চিন্তার চেয়ে পকেট ভারী করার চিন্তারই আধিক্য বেশি।

শেষকথাঃ ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের মাঝে নৈতিকতার অভাবের কারণ কী?

এসব কিছুর ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে আজকের এ অনৈতিক অবস্থা। বলা যায়, ধর্মের বড়ই ক্রান্তিকাল যাচ্ছে এদেশে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজ ভাষায় উপলব্ধিপূর্বক কুরআন চর্চা বাড়াতে হবে।

Comments