পৃথিবীতে কে না চায় সুখী হতে? সুখের লাগি সকলের দৌড়। প্রত্যেকটি মানুষ সুখী হতে চায়। তার মগজে যেন পেরেকের মত গেঁথে দেয়া, কিভাবে সুখী হওয়া যায়? শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠার পর মানুষের মাথায় যে জিনিস টা কাজ করে সেটি হচ্ছে- কিভাবে সুখী হওয়া যায়! সুখের পিছনের প্রতিটি মানুষ অনবরত ছুটে চলছে। তবে, আসল কথা হলো- পৃথিবীতে কি আসলেই সুখী হওয়া সম্ভব? আমি মনে করি সম্ভব না! কারণ সুখের সাথে চাহিতার বিষয়টি সামনে চলে আসে, আর মানুষের জীবনে বাসনা বা চাহিদার সমাপ্তি নেই। একটা চাহিদার পূর্ণতা পেলে৷ নতুন করে আরেকটা চাহিদার উদ্ভব ঘটে। সেদিক থেকে সারাজীবন মানুষের চাহিদা অপূর্ণ ই থেকে যায়। তাহলে সুখ আসলে কি? সুখ বলতে আমরা কি বুঝি? মানুষের পক্ষে কি সুখী হওয়া সম্ভব নয়? কি কি উপায়ে ই বা সুখে থাকা যায়?
জীবনকে সুখময় করে তুলতে হলে, আগে আমাদের ভাবতে হবে- সুখ জিনিস টা আসলে কি? সুখ একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। আর মেনটালিটি দিক থেকে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট, সে প্রকৃত সুখী। তাহলে সুখী হওয়ার পূর্বশর্ত মানসিকভাবে সুখী হওয়া। এখন প্রশ্ন হচ্ছে; মানসিকভাবে কিভাবে সুখী হওয়া যায়? মানসিক ভাবে সুখে থাকার উপায় কি? বা মানসিকভাবে সুখে থাকার মূলমন্ত্র কি? উপরোক্ত সকল প্রশ্নের সমাধান জানতে (সুখ দর্শন | সুখের গোপন ৱহস্য | সুখেৱ দার্শনিক তত্ত্ব) এ ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়ুন!
সূচিপত্রঃ সুখ দর্শন | সুখের গোপন ৱহস্য | সুখেৱ দার্শনিক তত্ত্ব
সুখের সন্ধানে জীবন
আপনি সুখী হতে চান? কে বা না চান সুখী হতে! আমারা প্রতিটি মানুষই সুখের দেওয়ানা। বিভিন্নভাবে ভাল থাকতে চেষ্টাও করি। কিন্তু সত্যিই কি আমারা ভাল থাকার আয়োজন করে মোটেও ভালো থাকতে পারি? একটু ধাবুন তো, আমাদের শিশুকালটা কত সুন্দর একটা সময় ছিল। কোন টেনশন নেই- নেই কোন স্ট্রেস। ছিল তাহা স্বপ্নহীন, স্বপ্নময় সাতরঙা জীবন। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে অসুখের সংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু কেন? আর কিভাবে ই এই অসুখীকে অতিক্রম করা যায়? স্বভাবগত দিক থেকে বলুন অথবা প্রাকৃতিকগত দিক থেকেই বলুন- মানুষ সুখান্বেষী বা সুখ অনুসন্ধানকারী। মানুষের পথচলার মূলবিন্দু সুখকে নিয়ে। কিভাবে সুখী হওয়া যায় এই লক্ষ্য নিয়ে মানুষের পথযাত্রা, এত ছুটোছুটি। কিন্তু এই সুখ জিনিসটা আসলে কি?
সুখ কি?- সুখ তত্ত্ব
বলতে গেলে সুখ কোনো বস্তুগত জিনিস নয়, সুখ একটি মানসিক ব্যাপার অর্থাৎ সুখ কোন বস্তুনিষ্ঠ নয়, সুখ আধ্যাত্বিক। সুখের নির্দিষ্ট কোন উৎস নেই। একেকজন একেক জিনিসে সুখী। আবার কেউ কিছু কিছু জিনিসে অসুখী। যেমন- কেউ সুখী উত্তম সহধর্মিণীতে, কেউবা সুখী অনেক অনেক অনেক টাকায়, আবার কেউবা সুখী ভালো সন্তানে, আবার অনেকে নিজেকে সুখী মনে করেন- কারো কল্যাণ বা সেবা করায়। তাই বলা যায় সুখী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন কারণ থাকেনা, একেকজন একেক কারণে নিজেকে সুখী মনে করেন। গরীব হলেই কেউ অসুখী নন, আবার বৃত্তবান হলেও যে কেউ সুখী মানুষ তাও নয়! সুখ নিতান্তই একটি আপেক্ষিক ব্যাপার।
আৱো পড়ুনঃ কুরআন শিক্ষার দর্শন কি?
সুখ কোথায় পাওয়া যায়?- সুখ দর্শন
সুখ এমন একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যা অর্থ দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে আমরা পণ্যদ্রব্য কিনে থাকি কিন্তু টাকা দিয়ে সুখ কি আদৌ কেনা যায়? যায় না। সুখ যদি হাট-বাজারে আলু-পটলের মত কিনতে পাওয়া যেত তাহলে হয়তো বিত্তবান লোকেরা সকলেই সুখী হতো। সুখ অনুভূতির ব্যাপার। আপনি এখন এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে মনে করুন- আমি একজন সুখী মানুষ। পৃথিবীর সেরা সুখী আমি। আমার যা আছে তা কিছুই যথেষ্ট। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক সুখে রেখেছেন, ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট! সুখী হতে নিজেকে সহজ করে ফেলুন। একটা কথায় আছে- সুখী হওয়া সহজ কিন্তু সহজ হওয়া কঠিন। সুখী হওয়ার পূর্ব শর্ত নিজেকে সহজ করে ফেলা। জীবনকে সহজ করে ভাবা খুব অল্প কিছুতেই নিজেকে সন্তুষ্ট রাখা। (কোথায় আমি সুখ খুঁজে পেতে পারি?)
কিভাবে সুখী হওয়া যায়?
আমরা সবাই সুখের জন্য মাতাল। এমন কোন মানুষ নেই যে কিনা সুখের খোঁজে ক্লান্ত হননি। এজন্য মানুষের মুখে মুখে আমরা একটা কথা শুনে থাকি- আসলে সুখী কারা- যারা যা কিছু আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। অর্থাৎ অল্পতেই যারা সন্তুষ্ট থাকে বা যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে তারাই সুখী। আসলে সুখের ব্যাপারটা এরকম-- একটি বিশাল অট্টলিকা বাড়ি নয়, বরং ছোট একটি বাড়ির পরিবেশটা সুন্দর হলেই সেখানে সুখী হয়ে থাকা যায়।
আৱো পড়ুনঃ ধর্মব্যবসা চালানোর এক মহাকৌশল
সুখের দার্শনিক তত্ত্ব | সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র | সুখের গোপন ৱহস্য
কারা সুখী?- এ বিষয়টা তত্ত্বীয় দিক থেকে দেখা যাক। আসলে সুখী কারা? মানুষ কি আসলে সুখী হতে পারে? আমি মনে করি পুরোপুরি সুখী হওয়া সম্ভব না! স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে সুখী হওয়া একেবারেই অসম্ভব! মানুষের মনের গভীর থেকে গভীরতর দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে সুখী হওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাহলে মানুষ কি আদৌ সুখী হতে পারেনা? হ্যাঁ সুখী হতে পারে; যে মস্তিষ্ক বিকৃত বা একসাইটমেন্ট বা যারা স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যারা বোধহীন। নির্বোধ ব্যক্তিরা সুখে হতে পারে। কারণ সুখী হতে দরকার বাসনা বা চাহিদার পূর্ণতা। আর অর্থনীতির ভাষায় মানুষের চাহিদার শেষ নেই। একটা চাহিদা শেষ তো আরেকটা চাহিদার আরম্ভ হয়ে যায়। যেমন- কেউ যখন ক্ষুধার্ত থাকে, তখন সে খাবার খাবার বলে খাবারের সন্ধান করতে থাকে, দিশেহারা হয়ে পড়ে পেটের ক্ষুধায়। তখন তার মনে হয় একমুঠা খাবার পেলেই যেন সে সুখী হবে। কিন্তু যখন পেটের ক্ষুধা (চাহিদা) মিটে যায়, তখন তার মন আবিষ্কার করে নতুন কোন চাহিদার। ক্ষুধার সমস্যা মিটে গেলেই, সে চাইবে আরাম আয়েশ, চাইবে বিখ্যাত হতে। তারমানে একটা চাহিদার শেষ তো আরেকটা চাহিদার শুরু। তাহলে সুখী কারা? মানসিকভাবে সুখী কারা?
একজন দার্শনিকের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল- উনার নাম সৈয়দ রশিদ আহমেদ। উনার বিখ্যাত একটি উক্তি হলো-- ❝কে ধনী?- যে সন্তুষ্ট সে ধনী, অসন্তুষ্ট কোটিপতিও ভিক্ষুক❞ অর্থাৎ যে মনের দিক থেকে সন্তুষ্ট তারাই ধনী। তারাই জগতের সুখী মানুষ। আর বৃত্তবান ব্যক্তি যদি মনের দিক থেকে অসন্তোষ হন তাহলে সে ভিক্ষুকের সমান বা অসুখী। সুখে থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
আৱো পড়ুনঃ কুরআনের আলোকে নূরতত্ত্বের জটিলতা খন্ডন
কুরআনের আলোকে সুখ দর্শন | সুখ কোথায়?
কুরআনের আলোকে সুখ কি এবং সুখী কারা? কুরআনের আলোকে সুখের খুটি হলো-- ইমান(বিশ্বাস), আস্থা, ভরসা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট, তৃপ্তি ও আশাবাদীতা। সবসময় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্টি রাখ। নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে হবে। তাহলে মন তৃপ্ত হবে। আপনারা হয়ত জানেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পেটে কোন খাবার ছিলোনা, তবুও উনার মুখে হাসি ছিল। এখানেই সকল সুখের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। আসলে সুখের ব্যাপারটি এরকমই। তাই তো বলা হয়ে থাকে-- ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আল-কুরআন আছে-
❝নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।❞
মানসিক শান্তির জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত?
সুখে থাকার বিষয়টি একেবারে মানসিক। মানসিক থাকতে পারলেই আপনি একজন সুখী মানুষ। মানসিকভাবে নিজেকে কিভাবে সুখীে রাখবেন তা জানতে এই ব্লগটি পড়ুন সুখ দর্শন। সুখে থাকতে হলে প্রথমে যা করতে হবে তা হলো মানসিকভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে। মানসিকভাবে ভালো থাকতে ছোট কিছু অভ্যাস প্রাকটিস অনেকটা অসুখকে সুখে পরিনত করা যায়। আজকের ব্লগপোস্ট মানসিক ভাবে সুখী থাকার উপায় | সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র | কি উপায়ে আপনি সুখি হবেন? দুঃখকে সুখে পরিনত করার কয়েকটি টিপস নিয়ে অালোচনা করা হচ্ছে এই ব্লগে। ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং আজ থেকে নিজের জন্য একটু সময় বের করে, এই টিপস (অভ্যাসগুলি) শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন একই নিয়মে প্রাকটিস করতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ মানসিক ভাবে সুখী হবেন। জেনে নিন, মানসিকভাবে সুখী হওয়ার মন্ত্রসমূহ---
সুখ দর্শন | মানসিক শান্তির উপায়সমূহ
- যেখানে তোমার কদর নেই সেখানে যাবেন না
- প্রতিজ্ঞা করুন- আপনি আর রাগবেন না
- ক্ষমা করতে শিখুন
- সোসাল মিডিয়া বর্জন করুন এবং বাস্তব যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন!
- যে বোঝেনা তাকে বোঝাতে যেওনা
- যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের সঙ্গে সময় কাটান
- পরিবারকে সঙ্গ দিন
- মস্তিষ্ক থেকে নেতিবাচক চিন্তা দূর করুন
- মস্তিস্ক চাপমুক্ত রাখুন
- আবেগে ব্যাপারে সজাগ ও আত্নবিশ্বাসী হোন
- ঘুমের ব্যাপারে সজাগ থাকুন
- নিজেকে সময় দিন, ধ্যানে মগ্ন হোন
- ভালো ও মন্দ কাজের তালিকা তৈরি করুন
- নিচুকে উচুতে তুলিও না!
- পল্টবাজদের সাথে মেলামেশা করিওনা
যেখানে তোমার কদর নেই সেখানে যেওনা
মানুষের মন এক সূত্র ধরে চললেও মানুষ ভেদে কর্ম ব্যবস্থা ভিন্ন। এজন্যই কিছু মানুষ আছে মধুর প্রকৃতির আবার কিছু মানুষ তীরের মত বিষাক্ত। এ রকম মানুষের থেকে দূরে থাকুন। নিজেকে দূরে রাখুন কারন এরা হলো ধোকাবাজ, এরা সহজেই অন্যকে দোষারোপ করে এবং সহজে অন্যদের বিপদে ফেলে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। সুতরাং এরকম যারা আপনাকে ছোট করে, অসম্মান করে, আপনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেসব মানুষের সাথে চলাফেরা বা মেলামেশা বন্ধ করুন। আপনাকে সব সময় অসম্মান বা ছোট করে কথা বলে এমন বিষাক্ত মানুষকে জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। আমি মনে করি- এতে আপনি কর্মোদম থাকবেন এবং মানসিকভাবে সুখে থাকবেন।
আপনি আর রাগবেন না
সবসময় রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। রাগ এটা এমন একটি জিনিস, যা নিজের ই ক্ষতি করে। অর্থাৎ রেগে গিয়ে অন্যের যতটা ক্ষতি করতে চাইবেন, এর থেকে ক্ষতি বেশি আপনার ই হবে। অনেকসময় এই রাগ ই জীবনকে ধংস করে দেয়। রাগ দমনে করলে অনেক সমস্যা থেকে বেঁচে যাবেন। তাই আপনি সিদ্ধান্ত নিন- সকল পরিস্থিতে আপনি রাগমুক্ত থাকবেন। কারণ রেগে যাওয়া মানুষগুলোই বেশি হেরে যায়। এছাড়া ধরুন- কেউ আপনার সাথে বাজে আচরণ করেছে, তার উপর থেকে রাগ সরিয়ে ফেলুন। এতে আপনার মস্তিষ্কের চাপ কমে যাবে এবং আপনি মানসিক ভাবে সুখী থাকতে পারবেন।
ক্ষমা করে দিন; মানসিক ভাবে সুখী থাকতে
আপনাকে বলা খারাপ কথাটি ডাস্টবিনে ফেলে দিন। কবে কে কি বলেছে এসব মনে রেখে নিজের শান্তি নষ্ট করবেন কেন? কারণ মান-অভিমান কেউ বুঝতে চায় না। আপনি অপমান মনে করে যে কথাটি মনে রেখেছেন সেটাতে আপনার কষ্ট ছাড়া আর কার কি এসে যায় বলুন তো! এরপরেও ভুলতে না পারলে আপনাকে বলা খারাপ কথাটি প্রয়োজনে একদিন প্রিয় মানুষটিকে শান্তভাবে বলতে পারেন। আপনার এইজন্য কেমন অনুভুতি হয়েছিল সেটিও শেয়ার করতে পারেন। অথবা তাকে ক্ষমা করে দিন। মানসিকভাবে ভালো থাকতে ক্ষমা করতে শিখুন, ক্ষমার করার অভ্যাস করুন! রাগের থেকে ক্ষমাকে বেশি গুরুত্ব দিন। ক্ষমা মহৎ গুণ। ক্ষমা করার লাভ- মানুষ কে ক্ষমা করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। জীবনে আসে শান্তি। ক্ষমায় শারীরিক ও মানসিক শান্তি বাড়ে। তাই মানসিকভাবে সুখী থাকতে ক্ষমা করুন।
সোসাল মিডিয়া বর্জন করুন এবং বাস্তব যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন!
আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন, পরিবারের সাথে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হউন, সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে আসুন। সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তবে এই যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন। সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়। তাই সুখী হতে সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী।
যে বোঝেনা তাকে বোঝাতে যেওনা
একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকে ভালে এবং মন্দ বোঝার জ্ঞান দিয়েছেন। কেউ যদি খারাপ কিছু বলে বা খারাপ কিছু করে, এবং তাকে সেখান থেকে বাহিরে আসতে বলেন। অথবা সত্য বললে যে রেগে যায় বা বিরক্তবোধ করে তার সাথে কথা বলবেন না। এমন মানুষদের থেকে নিজে দূরে রাখুন। এদের নিয়ে চিন্তা করা বা মাথা ঘামানে বন্ধ করে দিন। ভালো থাকবেন।
যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের সঙ্গে সময় কাটান
পজিটিভ মানুষের সঙ্গ রাখতে হবে। যে আপনার ভাল চায়, আপনাকে সম্মান করে, সব কথা আপনার ভালোর জন্য বলে, আপনাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করে; এমন মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে যাতে আপনার পজিটিভ এনার্জি সব সময় ঠিক থাকে।
পরিবারকে সঙ্গ দিন
গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন। কারণ পরিবার আপনাকে পরম স্নেহে-গভীর মমতায় ভালোবাসে। তাদের সাথে যতবেশি সময় কাটাবেন, তত বেশি আপনি নিজেকে উপলব্ধি করতে পারবেন। এই সময় মন উৎফুল্ল থাকে। এতে আপনি মানসিকভাবে সুখী হবেন।
মস্তিষ্ক থেকে নেতিবাচক চিন্তা দূর করুন
মস্তিষ্ক থেকে নেগেটিভিটি ঝেড়ে ফেলতে হবে। অহংকার, ইর্ষা এবং লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। অন্যের বিপদে বা সমস্যায় তার পাশে থাকতে হবে। অপরের কষ্ট দেখে কখনো আনন্দ প্রকাশ করোনা।
মস্তিস্ক চাপমুক্ত রাখুন
সব কিছুকে অতিরিক্ত সিরিয়াসলি নেয়া যাবে না। কিছু বিষয় হালকা ভাবে নিতে হবে, কিছু বিষয় ইগনোর করে যেতে হবে। মানুষ উন্নত জীব এবং মস্তিষ্কও উন্নত। যে যত বেশি অ্যাডভান্স সে ততো বেশি বিচক্ষণ। আমাদের শরীরে পরিচালনা হয় মস্তিষ্কের দ্বারা অর্থাৎ আমরা যদি মস্তিস্ককে একটি গাছের সাথে তুলনা করি তাহলে গাছের ডালপালা হচ্ছে হচ্ছে আমাদের শরীর এবং তার শিকোড় হচ্ছে মস্তিষ্ক। সুতরাং লতাপাতা ঠিক রাখতে হলে শিকড়ের যেমন যত্ন নিতে হবে। তেমনি মানুষের শরীর/মন ঠিক রাখতে হলে মস্তিষ্কের যত্ন নিতে হবে।
মস্তিষ্ক হচ্ছে মানুষের শরীরের চালিকা শক্তি। মস্তিষ্ক হচ্ছে ড্রাইভার। মস্তিষ্ক যদি ঠিক না থাকে তাহলে নিশ্চিত কি হবে বলুন তো? এক্সিডেন্ট! তাই শরীরকে ঠিক রাখতে হলে মস্তিষ্ককে ঠিক রাখতে হবে। ধরুন কোন বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করছেন এবং এটি আপনাকে খুব চাপ সৃষ্টি করছে তাহলে সে চিন্তা থেকে বিরত থাকুন কারণ এরকম চিন্তার ফলে মস্তিষ্ক তার নিয়ন্ত্রণ হারায়। মস্তিষ্ককে চাপমুক্ত রাখতে সবুজ ঘাসের উপর হাটুন, বাড়ির পাশে নদীতে ঘুরতে যান, গাছপালার সবুজ দৃশ্য উপভোগ করুন। আত্মবিশ্বাসী হোন এবং একাকীত্ব বর্জন করুন। পরিবার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে মিশুন, আড্ডা দিন, গল্প করুন এবং হাসুন। এতে মস্তিষ্কের উপর থেকে চাপ কমে যাবে এবং যে যত বেশি মস্তিষ্ক থেকে চাপমুক্ত সে ততো বেশি মানসিক দিক থেকে উন্নত বা সুখী!
আৱো পড়ুনঃ নারীর হৃদয় তত্ত্বের গোপন কথা
আবেগে ব্যাপারে সজাগ ও আত্নবিশ্বাসী হোন
নিজেকেই নিজের খেয়াল রাখতে হবে, নিজের আবেগের ব্যাপারে অন্য কারও উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। কারো উপর থেকে কিভাবে নির্ভরশীলতা কমানো যায়? সেজন্য আত্নবিশ্বাসী হোন। একজন আত্নবিশ্বাসী মানুষের মানসিক শক্তি অন্য মানুষের থেকে কয়েক গুণ বেশি থাকে।
অন্যের সাথে নিজের তুলনা করা বন্ধ করতে হবে। আমরা সবাই ই আলাদা, তাই নিজের প্রতিভার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং অন্যের গুণের জন্য তার প্রশংসা করার অভ্যাস করতে হবে।
ঘুমের ব্যাপারে সজাগ থাকুন
আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে। এর ফলে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।
নিজেকে সময় দিন, ধ্যানে মগ্ন হোন
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন অন্তত ১০ মিনিট করে ধ্যান করা। প্রতিদিন অল্প সময় পেলেও একটু মাইন্ডফুলনেন্স মেডিটেশন প্রাকটিস করতে পারেন। নিজেকে স্থির রাখতে জোরে জোরে শ্বাষ নিয়ে বুকের ভিতর আটকে রেখে আস্তে আস্তে ছাড়ুন। একটু চোখ বন্ধ করে সারা শরীরে মনোযোগ দিন। পঞ্চ ইন্দ্রিয়র প্রতিটিতে ১ মিনিট করে মনোযোগ দিন। এ ধরনের কাজে পূর্ন মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
ভালো ও মন্দ কাজের তালিকা তৈরি করুন
নিজের গুনগুলির তালিকা করে ফেলুন। প্রতিদিন তালিকাটি নিয়ে ১০ মিনিট বসে আপনার আরও নতুন কোন গুন খুঁজে পেলে যুক্ত করুন। প্রতিদিন নিজের প্রশংসা করবেন। এই গুনগুলির জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিবেন। কখনোই নিজেকে খারাপ ভাববেন না। আজ থেকে ভাবতে শুরু করুন- আপনি খারাপ না। সময়, পরিস্থিতি, ও পাত্রের কারণে কিছু কাজ করে ফেললেও যেগুলোর জন্য সবসময় আপনি দায়ী না। এই চিন্তাই ইনশাআল্লাহ আপনাকে ভালো কাজের উৎসাহ দেবে।
তোমার চোখে যে নিচে পড়ে গেছে, তাকে উপরে তোলার চেষ্টা করোনা
জীবনের চলার মানুষ অনেক ভালো মন্দ উভয়ের অভিজ্ঞতা পায়। কিছু মানুষ আছে যাদের একটিভিটি আপনাকে কষ্ট দেয়। অথবা কারো কোন কোন বাজে ব্যবহারের কারণে সে আপনার মনে ছোট হয়ে আছে। এমন মানুষ- তোমার চোখে যে নিচে পড়ে গেছে, তাকে উপরে তোলার চেষ্টা করোনা।
যারা আবহাওয়ার মত বদলে যায় তাদের সাথে মেলামেশা করিও না
সহজ বাংলা এক শব্দে যাদের বলা হয় গিরগিরি। ঘন ঘন রঙ পাল্টায়। কখনো লাল কখনো সাদা আর কখনো বা কালো আবার কখনো বা সবুজ। প্রতি পদে পদে নিজের স্বার্থ বা ব্যক্তিত্বের জন্য মোচড় ঘুরায়। এরকম মানুষগুলো স্বার্থপর হয়। এরা বাহিরে এক রকম আর ভেতরে অন্যরকম। এরা গোপনে মানুষকে বিপদে ফেলার ফন্দি বুনে। তাই এদের থেকে মেলামেশা বন্ধ করুন।
শেষকথাঃ সুখ দর্শন |সুখ তত্ত্ব |সুখের গোপন রহস্য| মানসিক সুখ
প্রিয় ভিজিটর, প্রথমে জেনেছি--সুখ কি? প্রকৃত সুখ কোথায় পাওয়া যায়? সুখের অনুসন্ধানে জীবন। কিভাবে একজন সুখী মানুষ হওয়া যায়? সুখের গোপন ৱহস্য। সুখের দার্শনিক তত্ত্ব। সুখের মুলমন্ত্র। কুরআনের আলোকে সুখ দর্শন ইত্যাদি। এবং পরে জানলাম- মানসিক শান্তির জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত? মানসিক ভাবে সুখী থাকার উপায়। উপরোক্ত কাজগুলো করা একটু কঠিন হলেও। প্রাকটিস করলে অভ্যাসে পরিণত করা সম্ভব। আর প্রাকটিস করতে না পারলে হয়তো মানসিক কোন সমস্যা থাকতে পারে। তাই আপনার মানসিক পরিস্থিতি জটিল হবার আগে প্রফেশনাল সাহায্য নিন। প্রফেশনাল সাইকোলজিষ্টগন সব গোপনীয়তা বজায় রেখে আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে যদি এই ব্লগ পোস্টে আলোচিত বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতেন পারে, আশা করা যায় আপনি মানসিক ভাবে সুখী থাকতে পারেন। আল্লাহ ভরসা।
আৱো পড়ুনঃ অহংকারী নারীর মনের রহস্য ফাঁস!
সুখ, সুখ দর্শন, মানসিক সুখ, সুখে থাকার উপায়
প্রিয় ভিজিটর'স সুখ সম্পর্কিত এই সকল বিষয় অনেকেই ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে থাকেন----
সুখী হওয়ার উক্তি, সুখী জীবন, মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়, জীবনে সুখী হওয়ার সহজ উপায়, নিজেকে ভালো রাখার উপায়, ভালো থাকার সংজ্ঞা। দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়, কি খেলে মন ভালো থাকে? মন ভালো থাকার উপায়, সুস্থ থাকার উপায়, খারাপ থেকে ভালো হওয়ার উপায়
উপরোক্ত কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং কিছু বিষয় সময় সংকটেৱ কারণে বাদ পড়েছে। ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে "সুখের খোঁজে জীবন" সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় নিয়ে লেখা হবে, ইনশাআল্লাহ!!
এই ব্লগগুলো আপনার জন্য
Thank you
ReplyDelete