মা হবার আনন্দটা সবার চোখে পড়ে, কিন্তু ভিতরের কষ্টটা হয়তো কারো নজরে আসেনা। যেটা তিলে তিলে অনুভব করে শুধু নারী, শুধু একজন গর্ভধারিণী মা! আমরা হয়তো কেউ কেউ নারীর শরীরের উপরের পরিবর্তনটা দেখি কিন্তু নারীর মন বা ভিতরের পরিবর্তনটা আমরা বোঝার চেষ্টা করিনা। এই সময় পরিবারের সবার উচিত তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা বিশেষ করে গর্ভবতী নারীর স্বামীর। প্রতিটি নারী ই চায় তার স্বামী এই সময় তার পাশে থাকুক। একজন গর্ভবতী নারী তার স্বামীর থেকে পাওয়া যত্ন গুলো বিশেষ করে মনে রাখে, গর্ভাবস্থায় একজন নারী খুবই ইমোশনাল থাকে। অল্প কিছুতেই তার মন খারাপ হয়ে পড়ে। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন তার শারীরিক ও মানসিক দুটো দিকের ই পরিবর্তন হয়। এ সময় গর্ভবতী নারীর শরীরের পরিবর্তন হয় এবং শরীরের সৌন্দর্য দিন দিন কমতে থাকে। এসময় সে নিজেকে ভীষণ অসহায় ভাবে, তখন সে তার স্বামীর সাপোর্ট আশা করে। সে চায় তার স্বামী তাকে শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে বুঝাক এবং ডেলিভারির পর সবকিছু আগের মতোন ঠিক হয়ে যাবে, এসব সে তার স্বামীর থেকে আশা করে।
সূচিপত্রঃ নারীর মন | নারী কখন খুব অসহায় বোধ করেন?
গর্ভকালীন সময় নারীর মনস্তত্ত্ব
মেয়েরা তার চরম শত্রুকেও একদিন ক্ষমা করে দেয় কিন্তু তার প্রেগ্ন্যাসির সময় যে তাকে একটু কষ্ট দিয়েছে তাকে কোনদিন ক্ষমা করেনা। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কে তাকে কাঁচা আম ভর্তা মাখিয়ে খাইয়েছে, কে তাকে মাথায় তেল দিয়ে দিয়েছে, কে তাকে একটু সেবাযত্ন করেছে তা আজীবন তারা মনে রাখবে। অন্যদিকে কে কে তাকে খাওয়া নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলেছে, কার কাছে কদবেল খেতে চেয়েছিলো কিন্তু সে দেয়নি, কার বাড়ির বিরানির ঘ্রান নাকে এসেছিলো কিন্তু এক প্লেট দেয়নি এই কথাও সে আজীবন মনে রাখবে এবং তাদেরকে আজীবন সে বাতিলের খাতায় টুকে রাখবে।
আসলে প্রেগ্ন্যাসিটা একটা মেয়ের জীবনে এমন একটা সময় যখন তার মন কোন যুক্তি, পরামর্শ, কোন নিয়ম বোঝেনা। নারী অবুঝ শিশুর মতো হয়ে যায়।
পাশের বাড়ির বিড়ালের ঝগড়া দেখেও সে ভেউভেউ করে কাঁদে, আবার অতি শখের জামাটা কেন গায়ে আঁটছেনা এটা নিয়েও ফুপিয়ে কাঁদবে। স্বামী যদি একটু কথা না শুনে, পাহাড় ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়, চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা পড়তেই থাকে। আসলেই এই সময়টা একটা মেয়ের জীবনের বড় আশ্চর্যের সময়।
নারী সম্পর্কিত এই লেখাগুলো পড়ুন--
গর্ভকালীন সময় নারীর কি দরকার?
তাই আপনার কাছের মানুষ যদি কেউ প্রেগন্যান্ট থাকে তার যত্ন নিন। অন্য সবার থেকে একটু আলাদা প্রায়োরিটি তাকে দিন। একটু তার দাবীগুলো পূরন করুন। গর্ভবতীর যত্ন নিন, এতে অনাগত মেহমান ও সুখি হবে। মায়ের মন মানসিকতা গর্ভের সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে, তাই নারীর গর্ভের সময় পরম স্নেহে রাখুন। নারী অবুঝ শিশুর মতো হওয়াকে মেনে নিন। তার মতামত কে যুক্তির জালে জটলা না বাধিয়ে, তার ছোট ছোট ইচ্ছাগুলো পূরুন করুন। তাকে উপদেশ নয়, শান্তনা দিন। নারী চায় এসময় তার স্বামী পাশে থাকুক, তাই তাকে সময় দিন।
গর্ভকালীন সময়ে নারীর মনের অবস্থা
এ সময়টা ঠিক কাঁচের মত, ভাঙার পর টুকরো টুকরো করে এগুলো যতই জুড়ে দেয়া হোক দাগগুলো থেকে যায়; তেমনি নারীর প্রেগনেন্সির সময় তাকে কথা শুনালে বা কষ্ট দিলে সেগুলো মনে রাখে সারাজীবন। একটা ব্যাপার আপনি খেয়াল করলে দেখবেন- অনেক সময় নারীরা বলে থাকে; আমার পেটে যখন বাচ্চা ছিল ওমুক ব্যক্তি আমাকে এটা বলে ওটা বলেছে।
নারীর মনস্তত্ত্ব ই হচ্ছে- প্রেগনেন্সির সময় তারা অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। ভালোবাসা এবং অবিচার ২ টাই তারা স্মৃতিতে ধারন করে রাখে।
এই ব্লগগুলো পড়ে ফেলুন--
গর্ভকালীন সময় নারীর মনের কথা
অনেক নারী বলেছে--
❝গর্ভকালীন সময়ে -সাধারণ বিষয়কেও তাদের অসহ্য লাগে, আর মন খুব দুর্বল থাকে। এসময় কেউ কিছু বললেই কষ্ট পায়।❞
আবার অনেকের থেকে জানতে পেরেছি- ❝আমারও এমন সময়ে (প্রেগনেন্সির) যারা আমাকে অবহেলা করেছে আমি তাদের মেনে নিতে পারিনাই, এসময়ের কথাগুলো মনে হলে তাদের উপর এখন রাগ হয় আমার।❞
❝আমার তো কাছের মানুষ গুলো এতো কষ্ট দিয়েছে যে,সত্যিই কখনও ক্ষমা করতে পারবোনা।❞
❝আমার প্রেগনেন্সিতে যা আঘাত আমি পাইছি তা সারা জীবন মনে রাখার মতো। হায়রে বেহায়া বেলাজা মন কেন এতো কিছু খাইতে চাইছিলি।যার পরিনাম এমন হয়ে দাঁড়াইলো।❞
❝নিদারুণ তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে দিয়েছে এই সময়টা। আসলেই কখনো এই সময়কার ঘটনা গুলো ভুলা যায় না।❞
নারীর মন | নারী কখন খুব অসহায় বোধ করে?
নারী প্রেগনেন্সির সময় একদম শিশুদের মতো নরম মনের হয়ে যায়। তার আচরণের পরিবর্তন ঘটে থাকে। এসময় অল্পতেই রেগে যায় আবার আদরও পেতে চায়। কিন্তু মেয়েদের এই ব্যাপার গুলো কয়জন ই বা বুঝে বলেন। তাদের কাছে এই গুলো ন্যাকামি মনে হবে। আপনারা হুমায়ূন আহমেদকে হয়তো সকলে চিনে থাকবেন। বাংলাদেশের অন্যতম বিপ্লবী একজন লেখক। তিনি নারীর মন নিয়ে চিন্তা করেছেন। নারীর মনস্তত্ব নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন-- ❝পুরুষের অশ্রুর পিছনে এক যুদ্ধ পরিমাণ রহস্য লুকিয়ে থাকে আর নারী তো লিপস্টিক খুঁজে না পেলেই কান্না শুরু করে।❞
বিঃদ্রঃ বিশেষ করে প্রেগনেন্সির সময় স্ত্রীর যত্ন বহুগুণে বাড়ান!
আপনার জন্য আরো কিছু ব্লগ--
Hm sundor
ReplyDelete