কারো বলা কথা সহ্য করার উপায় কি?


আজকের ব্লগপোস্টটি- কারো বলা কঠিনতর কথা সহ্য করার উপায় কি? এখানে কারো শব্দটির দ্বারা প্রশ্ন করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ একজন কষ্ট দিয়ে কথা বললে সে কষ্টময় কথাকে কিভাবে অতিক্রম করা যায়। কারো কথা কে হজম করে নিজের মনকে কিভাবে তা থেকে নিরাপদ রাখা যায়? আপনি যদি কারো বলা কথায় কষ্ট পান, কষ্টকে সহ্য করে থাকতে চান তাহলে প্রথম শর্ত হচ্ছে সে মানুষটিকে আপনার উপেক্ষা করে চলতে হবে। তবে এর সাথে আরো কিছু বিষয় আছে। সেই মানুষটি কেন আপনাকে কটু কথা বলল? এই বিষয়টি আগে বুঝতে হবে। যাইহোক আজকের ব্লগপোস্ট হচ্ছে- কারো দেয়া কষ্টকর কথাকে কিভাবে সহ্য করে থাকা যায়। একেক মানুষ একেক ভাবে তাদের দুঃখ, অবহেলা, কষ্টগুলোকে যাপন করে থাকেন। আমি যখন কারো বলা কথার মাধ্যমে কষ্ট পাই তখন আমি বাড়িতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে একা একা বসে থাকি। অনর্গল মোবাইল টিপি। ঘুমাই। কারো সাথে কোন কথাবার্তা বলি না। চুপচাপ থাকি। আবার অনেকে হয়তো কারো বলা কথায় কষ্ট পেলে বই পড়ে, ফানি ভিডিও দেখে থাকেন। অর্থাৎ মনের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষ নানান রকম চেষ্টা করে থাকেন। একেক জন একেক উপায়ে কষ্ট-দুঃখগুলোকে যাপন করার চেষ্টা করেন। আজকের ব্লগপোস্টের আলোচনার মূল বিষয়- কারো কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট, কষ্ট মনে হবে না এরকম কোন উপায় আছে কি? কারো বলা কথাকে সহ্য করার উপায় কি? জেনে নিন কারো বলা কথাগুলোকে কিভাবে আপনি সহ্য করে থাকবেন--

সূচিপত্রঃ মানুষের বলা কথা সহ্য করার উপায়

কারো প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কিভাবে কাটানো যায়?

কোন মানুষ যদি সত্যি আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকেন এবং আপনি যদি সে কষ্টগুলোকে সহ্য করে থাকতে চান। তাহলে প্রথমে যেটা করবেন সেটা হলো দূরত্ব তৈরী করা। তার খারাপ দিক গুলো সামনে আনা যে গুলো আপনাকে কষ্ট দিয়েছে এটা বেশি বেশি মনে করবেন কাজে দিবে। তার সাথের ভালো সময় গুলো র কথা কখনই মাথায় আনবেন না, তাহলে আপনি আবারও আগের জায়গায় চলে যাবেন। এটা হচ্ছে সব চেয়ে খারাপ জিনিস। দশ টা খারাপ ঘটনা মনে আনার পর ও একটা ভালো অনুভুতি সব এলোমেল করে দিতে পারে, এই জন্য বলে মানুষের মন, বুঝা মুশকিল!! কষ্ট দেওয়া মানুষ থেকে দূরে থাকুন এবং ভালো কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, দেখবেন মনে আসবে না!! তখন কেউ কষ্ট দিলে তা সহ্য করা ক্ষমতা তৈরি হবে।

কঠিন কথা বলা মানুষগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে

অনেকে তাদের মনোভাব প্রকাশ করে থাকেন- কারো বলা কথায় আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি সেই কষ্টগুলোকে আমি কিভাবে ভুলে থাকতে পারি? কেউ যখন আমাকে কঠিন কথা বলে কষ্ট দেয়, সেই কষ্টগুলোকে যেন আমার কষ্ট মনে না হয়! এরকম কি কোন উপায় আছে? হ্যাঁ কারো কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট, কষ্ট মনে হবে না এরকম উপায় আছে তবে আমার কথা হচ্ছে-- আপনি যদি ইচ্ছা করে বিষ খান এবং মনে মনে ভাবেন বিষ খেয়েও আমি কিভাবে না মরে থাকতে পারি! তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? কোন কাজের কাজ হবে না। এর কারণ বিষ খেলে মরতে হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ কারো বলা কথা কে সহ্য করে থাকতে হলে প্রথমে তাকে ভুলে থাকতে হবে, তার থেকে দূরে থাকতে হবে। সে ব্যক্তিটিকে উপেক্ষা করতে হবে। তবেই আপনি তার দংশন থেকে বাঁচতে পারবেন। যারা কষ্ট দেয় তাদের জীবন থেকে বের করে দেন, তারপর সময়ের অপেক্ষা, আস্তে আস্তে কষ্ট কমে আসবে। আর যদি কষ্ট দেওয়া মানুষগুলারে যত্ন করে রেখে দেন তাহলে কষ্ট থাকবেই সাথে। সুতরাং তাদের যত্ন করে না রেখে দিয়ে দূরে সরায়ে রাখুন।

নিজেকে স্ট্রং থাকতে হবে

কেউ আপনাকে অসহ্যকর কথা বলে কষ্ট দিলে সে দুঃখকে সহ্য করতে নিজের মনোবলকে শক্তিশালী করতে হবে। এবং যে আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তার নেগেটিভ দিকগুলো ভাবতে হবে। কারণ আপনার মাথায় যদি তার সমন্ধে নেগেটিভ ধারণা আসে তাহলে তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে এবং তখন আপনি তার দেওয়া কষ্টকে একটু লাঘব করতে পারবেন। তার নেগেটিভ সাইট ভেবে কিছুক্ষণ তার প্রতি একটা ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে পরে আবার তার জন্য কষ্ট হতে পারে। তাই আপনার সহ্যক্ষমতা বেশি থাকতে হবে। স্ট্রং মেন্টালিটি ছাড়া কারও তো দুঃখকে সহ্য করা পসিবল না। মানুষের যেহেতু রোবট নয় তাই কেউ যদি কাউকে কষ্ট দেয় তাহলে তার যা কষ্টগুলোকে সহ্য করতে মানুষের কষ্ট লাগারই কথা। কষ্ট ই লাগবে শুধু ক্ষমতা থাকতে এটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার। সো বি স্ট্রং। মনটাকে শক্ত করতে হবে। নিজের মনটাকে ব্যক্তিগত সম্পদ ভাবতে হবে। মনটাকে বুজাইতে পারলেই কারোে দেয়া কষ্ট সহ্য করতে পারবেন।

কষ্ট দেয়া মানুষগুলোকে তুচ্ছ ভাবতে হবে

তাকে গোনায় ধরবেন না, সে কোথাকার কে যে তার কথায় আমার কষ্ট পেতে হবে! এরকম করে ভেবে দেখুন দেখবেন তাহলে তার জন্য আপনার আর কষ্ট হবে না। কষ্ট হলেও কষ্টকে সহ্য করতে পারবেন।
বারবার ভাববেন, সবসময় নিজেকে ভালোবাসেন অন্যের কথায় এতো বেশি কষ্ট লাগবে না। লাগলেও উপ্রে উপ্রে হজম করতে চেষ্টা করবেন, কাউকে বুঝতে দিবেন না তার কথায় বা কাজে কষ্ট পেলেন। কিছুদিন সহ্য করবেন আস্তে আস্তেই সব ঠিক হয়। সুখ দুঃখ কষ্ট মানুষের জীবনের অংশ। এইসব স্বাভাবিক ভাবে নিন। পার্সোনালি নিলে বেশি কষ্ট হবে।

কথা হজম করতে শেখা

মানুষের কথা হজম করতে শিখুন। কথা হজম করে তো শিখাটা অনেক কঠিন কাজ। অনেকে সেটা পারেন না। মানুষ যা কিছুই বলুক আপনি নিজের মতো করে ভাব নিয়ে থাকবেন কারণ নেতিবাচক কথা কেয়ার করবেন না। যে যা ইচ্ছে বলুক; না শুনার ভান করে থাকুন। কেউ কিছু বললে চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন যেন কিছুই হয়নি। মানুষটি যদি আপনার খুব প্রিয় হয় তবুও তাকে ইগনোর করবেন। প্রথম দিকে হয়তো একটু কষ্ট লাগবে খারাপ লাগবে কিন্তু আপনি তার খারাপ দিকগুলো নিয়েও ভাববেন কিছুদিন পর দেখবেন তার কথা সহ্য করার ক্ষমতা আপনার মধ্যে অটোমেটিক্যালি চলে আসবে।
কেউ কিছু বললে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিবেন। হজম করতে শিখে গেলে কষ্ট মনে হবে না। কে কি বলল সেসব এ কান না দিলে কিছুই মনে হবে না। কারো কথা কানে নিবেন না অর্থাৎ কারো কথা মাথায়ও ঢুকাবেন না!

কথা সহ্য করে থাকা

কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
আমি অগ্নির অভ্যন্তরে হাটিয়াছি, যা পুড়িবার ছিল তাহা পুড়িয়া গিয়াছে, আর যাহা রহিয়াছে তা মরিবার নহে!
আপনাকে এই কষ্ট জালা যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই আসতে হবে, একটা সময় পর কোন যন্ত্রনা কোন কষ্টই কষ্ট মনে হবে না।
জালাল উদ্দিন রুমি বলেছিলেন--
ঘষা খেতে ভয় পেলে চকচক করবে কিভাবে!
সুতরাং জীবন সুন্দর । নো চাপ। লাইফ ইজ অসাম। কে কি কথা বলে বলুক মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সবকিছু এনজয় করুন। ইনশাআল্লাহ সব সম্ভব। সব ভালো হবে।

কারো উপর নির্ভর না করা

ধাপে ধাপে একটা সময় মনে হবে- সবাই পর করে দিচ্ছে। সুতরাং আপনার আপনি ছাড়া কেউ আপন নয়, এমনকি নিজের, মা বাবা ও না। কারোর উপর নির্ভর করবেন না। বাবা-মা, ভাই, বোন, বর, বউ, কাজের লোক। কারোর উপর না। এবং কারো কাছ থেকে কোনকিছু প্রত্যাশা করবেন না। হয়তো ভাবতে পারেন- এরকমভাবে কেমনে থাকা যায়? জ্ঞান অর্জন করুন সার্টিফিকেট না। স্কুল লাইফ থেকেই অর্থ উপার্জন করুন আপনি মেয়ে হন বা ছেলে হন। সৎ হোন। পরিবার প্রতিবেশী আত্মীয় দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন। অবশ্যই সৎ,জ্ঞানী, বিচক্ষণ,সুশিক্ষিত  মানুষকে বেশি প্রাধান্য দেবেন। সুতরাং নিজেকে চিনুন, একটু কষ্ট হবে চিনতে,নিজেকে চিনে গেলে, আর তেমন কষ্ট হবেনা- হবেনা। কিন্তু মানুষ কষ্ট দিবেই - এটা থামাতে পারবেনা। ভালো থাকবেন ইনশাআল্লাহ!

শেষকথাঃ কারো প্রতি আক্ষেপ-অভিযোগ না রাখা

সবচেয়ে সুন্দর রিভেঞ্জ হচ্ছে কারো প্রতি কোনোরকমের অভিযোগ, অপবাদ, ক্ষোভ, ঘৃণা না রেখে মানুষটাকে ভুলে যাওয়া! জাস্ট মানুষটা আমার কেউ না ব্যস! তারপর দেখবেন আপনার ভেতর আর কোনো অস্থিরতা নাই। আক্ষেপ নাই। হতাশা নাই! এমন প্রফুল্ল ভাবে বাঁচতে পারে ক'জন? নিজেকে ম্যান্টালি স্যাটিসফাই করতে পারলে জীবন আসলেই সুন্দর! 🖤

ব্রেকআপের পর অন্যদের তিতা লাগে কেন?

আমরা যখন কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ধোঁকা খাই বা ছ্যাকা খাই। তখন আমাদের মন ভেঙ্গে যায়। এবং ঠিক এই সময় অন্যান্য মানুষদেরও আমরা বিশ্বাস করতে ভুলে যাই। কারণ ওই প্রথম ব্যক্তিটি আমাদের বিশ্বাসকে ধোঁকা দিয়েছে। তাই অন্যান্য মানুষকে বিশ্বাস করতে পারি না। সুতরাং আমাদের উচিত সবার কাছ থেকে এক্সপেরিয়েন্স করা। আপন ভাবতে যাবেন না। কারো সাথে বেশি মেশার দরকার নেই। এরকম হয়ে গেলে কেউ কিছু মন থেকে দিলেও আর নিতে ইচ্ছে করবে না। মনে হবে এত টেনশন কেন দেয়! এত আটেনশনের তো দরকার নাই!! যে যার মত ছেড়ে দেন তাহলেই হল।
তাই বলে পাথর হয়ে যাওয়ার দরকার নেই। মায়া থাকা ভালো। এরকম কঠোর হয়ে গেলে আবার জগত সংসার বিষাক্ত লাগবে। সব সময় পাল্টাতে চাইবেন সবকিছু থেকে। তা হচ্ছে আরেক বাজে অবস্থা। সুতরাং যেমন আছেন ভালো আছেন। সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন।

Comments